“গ্রামের লোকজন বলেছিলেন ঐ তো দেখতে আবার অভিনেত্রী হবে!”:জুঁই

তার জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা উত্তরবঙ্গের মালদা জেলার চাঁচলের মৃজাতপুর গ্রামে।এমন একটি গ্রাম যে গ্রামে তিনিই প্রথম কম্পিউটার প্রশিক্ষন নেন।তিন বোন।গ্রামের দিকে তিন বোন।বাবা অসিত সরকার, পেশায় সরকারি কর্মচারী, মা ছিলেন পৃহবধূ।দুজনেই ছিলেন খুবই উচ্চ মানসিকতা সম্পন্ন।কিন্তু গ্রামের মানুষদের কাছে প্রতিনিয়ত গুঞ্জন শুনতে হতো।বাবা মাকে গ্রামের মানুষজন বলতেন মেয়েকে আবার কম্পিউটার শেখানো!
এহেন জায়গা থেকে তিনি যখন অভিনয় জগৎটাকে ভালোবেসে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন সেটা যে খুব একটা সুখকর ছিল না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।যাকে নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে তিনি আজকের জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী জুঁই সরকার।

জুঁই সাক্ষৎকার পর্বের শুরুতে জানালেন,”আমার পরিবারের দূর দুরান্তের কেউ অভিনয়ে ছিলেন না।যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি তখন প্রথম সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছিলাম।তার জন্য বাড়ি থেকে অনেক বকুনিও খেয়েছিলাম।ছোট থেকে আমার নিউজ রিডারের প্রতি অদ্ভুত একটা টান ছিল।বাড়িতে যখন বলেছিলাম আমি নিউজ রিডার হতে চাই সবাই তখন হেসেছিল।তখন বাড়ির সকলের ধারণা ছিল টিভির মধ্যে যারা থাকে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।কিন্তু আমার অদম্য জেদ ছিল।

 

গ্রাজুয়েশন করে কলকাতায় চলে আসি।বাড়িতে বলেই এসেছিলাম-মা কিছু করেই তবে ফিরবো।তার আগে আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন মামার সাথে কলকাতা দেখতে এসেছিলাম।আর কখনো অসিনি।স্বপ্নকে ভর করে বেরিয়ে পড়ি অচেনা একটা শহরে।এসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশনের কোর্স করার জন্য যাই।কিন্তু তখন অ্যাডমিশন কমপ্লিট হয়ে গেছে।তখন বজবজের লুঙ্গিতে একটা গ্রাউন্ড চ্যানেলে কাজ করতে শুরু করলাম।যদিও বেশিদিন করতে পারিনি,অনেকটা দূরত্বের জন্য।

 

সেই সময় উত্তরবঙ্গের আমার এক শিক্ষক বললেন তুই অন্য কিছুতে ট্রাই করছিস না কেন!সেই সময় জুনিয়র লেভেলের আর্টিস্ট হিসেবে শুরু করলাম।পাশপাশি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলাম।সেই সময়েই তরুণ প্রধান স্যারের দলে মাইম করতে শুরু করি।থিয়েটার রিপার্টারের সঙ্গে যুক্ত হলাম।ব্যাকস্টেজের বিভিন্ন কাজগুলো করতাম।একদিন দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন তুই টেলিভিশনে অডিশন দে।আমি যেহেতু বাংলা অনার্সের ছাত্রী তাই মুখস্থটা ভালোই করতে পারতাম।অডিশন দিয়ে ২০০৮ সালে জি বাংলায় ‘হিরো’ ধারাবাহিকে প্রথম সুযোগ পেলাম।ওখানে একমাস কাজ করেছিলাম।ওটাই আমার প্রথম ভালো সুযোগ।”

এরপর জুঁইয়ের অভিনয়টাই মনে ধরে গেল।কিন্তু ভালো কাজের সুযোগ আসছিল না।সেই সময়ে একটা কল সেন্টারে চাকরি নিলেন।রাতের ডিউটি নিতেন।যাতে দিনের বেলায় অভিনয়ের চেষ্টা করতে পারেন।রাত্রে ডিউটি করে দিনের বেলায় বিভিন্ন স্টুডিও পাড়ায় ঘুরতেন।টুকটাক কাজ পাচ্ছিলেন কিন্তু ভালো কাজ কিছুতেই পাচ্ছিলেন না।এরকম সময়ে জুঁই শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

 

নর্থবেঙ্গল ফিরে গেলেন।সেখানে মা বললেন- তোকে আর কোলকাতায় যেতে হবে না।তুই এখানেই কিছু কর।গ্রামের মানুষজন বলতে শুরু করলেন এরকম তো দেখতে আবার অভিনেত্রী হবে!

জুঁই এর জেদ আরো বেড়ে গেল।কলকাতায় ফিরে আবার স্ট্রাগল শুরু করলেন।কলকাতায় ফিরে ২০১৩ সালে প্রথম বড় ব্রেক পেলেন।ধারাবাহিকের নাম ‘রাইকিশোরী’।এই ধারাবাহিকে নেগেটিভ লিড মীরার চরিত্রে তিনি সকলের নজর কাড়লেন।তারপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি।এরপর তিনি করলেন ‘আমার দূর্গা’য় রিয়ার চরিত্র,’প্রথম প্রতিশ্রুতি’-তে সৌদামিনির চরিত্র,’নাগলীলা’য় মহানাগিন প্রমীলা,’যমুনা ঢাকি’তে রাজণ্যা,’উমা’য় সোমা,’ইরাবতীর চুপকথা’ ইত্যাদি।একের পর এক জনপ্রিয় মেগায় উল্লেখযোগ্য চরিত্র।

সম্প্রতি বড়পর্দায় তিনি অভিনয় করেছেন কিংশুক দে’র ‘দ্য রেড ফাইলস’-এ,অভিনয় করেছেন ‘এটা আমাদের গল্প’-তে যেগুলো খুব শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে।অভিনয় করেছেন ‘ব্রাউন’ নামের একটি হিন্দি ওয়েব সিরিজে যেটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাবে বলে জানা গেল।


অভিনেত্রীর ইচ্ছে সব ধরণের ফিল্ডে সব ধরণের চরিত্র তিনি করতে চান।

সাক্ষাৎকার:রামিজ আলি আহমেদ
ছবি:বাবান মুখোপাধ্যায়
রূপসজ্জা ও কেশবিন্যাস রনিতা দাস চন্দ্র